.
যা বেদবাহ্যাঃ স্মৃতয়ো যাশ্চ কাশ্চ কুহষ্টয়ঃ।
সর্বাস্তা নিষ্ফলাঃ প্রেত্য তমোনিষ্ঠা হি তাং স্মৃতাঃ।।
(মনুস্মৃতি ১২।৯৫)
.
অর্থঃ যে সকল স্মৃতি বেদবহির্ভূত, আর যে সকল শাস্ত্র বেদবিরুদ্ধ কুতর্কমূলক, সে সকল শাস্ত্র নিষ্ফল জানিবে, সেই সকল শাস্ত্র তমঃকল্পিত মাত্র।
.
উত্পদ্যন্তে চ্যবন্তে চ যান্যতোন্যানি কানিচিত।
তান্যর্বাককালিকতয়া নিষ্ফলান্যনুতানি চ।।
(মনুস্মৃতি ১২।৯৬)
.
অর্থ:-- যে সকল শাস্ত্র বেদমূলক নয়, বরং পুরুষ-কল্পিত, কালক্রমে তারা উৎপন্ন হয় এবং বিনষ্ট হয়। আধুনিক এসব শাস্ত্রকে নিষ্ফল ও মিথ্যা বলে জানবে।
.
সুতরাং, মনুস্মৃতিও প্রক্ষিপ্ত হতে পারে!!! এবং বেদবিরুদ্ধ কোনো শ্লোক প্রকৃত মনুস্মৃতিতে থাকা সম্ভব নয়। আর তাই বেদ বিরুদ্ধ কিছু মনুস্মৃতিতে খুজে পেলে তা অবশ্যই বর্জনীয়।
.
এছাড়াও প্রাচীন গ্রন্থে এইরকম বহু প্রক্ষিপ্ত শ্লোক হয়ে আসছে এ কথা বিখ্যাত দ্বৈতবাদী আচার্য মধ্বাচার্য বা আনন্দতীর্থ ‘মহাভারত তাৎপর্য নির্ণয়’ গ্রন্থে এই ভাবে বলেছেন -
.
কচি গ্রন্থ প্রক্ষিপন্তি, কচিদন্তরিতানপি। কুয়ুঃ কচিচ্চ ব্যত্যাসং, প্রমাদাচিদন্যথা।। | অনুৎসন্না অপিগ্রন্থঃ ব্যাকুলাইতি সর্বশঃ।।
(মহাভারত তাৎপর্য নির্ণয়, অ0২, সর্বমূল কুম্ভঘােণম সংস্করণ, পৃষ্ঠা ৯০৭)।
.
অনুবাদ- ধূর্ত ব্যক্তিরা কোন গ্রন্থে কোথাও প্রক্ষিপ্ত করে দেয়, কোথাও কিছুবাক্যলুকিয়ে ফেলে, কোথাও প্রমাদবশত পরিবর্তন করে এবং কোথাও জ্ঞানবশত পরিবর্তনকরে। এইভাবে যেগ্রন্থ এখনও নষ্ট হয়নিসেও অক্ষত অবস্থায় নেই অর্থাৎ তাতেও প্রচুর প্রক্ষিপ্ত হয়েছে।
.
এই জন্য কৌশিক সূত্রের ১৩, ১-৬ থেকে বৈদিক উদ্ধৃতির লেখক উপস্থাপিত করেছেন -
.
সিংহে ব্যাঘ্নে যশােহবিরিতি স্নাতকসিংহ ব্যাঘ্র বস্ত কৃঞ্চবৃষ ভরাজ্ঞাং নাভিলোমানি। দশানাং শান্তবৃক্ষানাংশকলানি। ৫।
এতয়ােঃ প্রাতরয়িং গিরাবর গরাটেষু দিবপৃথিব্যা
ইতি সপ্ত মর্মাণি স্থালীপাকে পৃত্তান্যশ্নাতি।৬।
.
অনুবাদ - সিংহ, ব্যাঘ্র, ব্রহ্মচারী, বৃষ, রাজা ইত্যাদির শরীরাংশ। মিশ্রিত করে বিশেষ প্রকার শক্তি অর্জন করার জন্য খাওয়া হোক ইত্যাদি সম্পূর্ণ বেদবিরুদ্ধ হওয়ায় অপ্রামাণিক মনে করি। এইরূপ কুসংস্কারমূলক বেদবিরুদ্ধ বচন কোন গ্রন্থেলক্ষিত হলে তা অপ্রামাণিক বলে ধরে নিতে হবে। মহাভারতের উল্লেখিত সাক্ষ্য অনুযায়ী এইরকম বচন ধূর্ত, নাস্তিক, মূর্খ, ধনলােভী লােকদের দ্বারা কল্পিত, সুতরাং এই সব শ্লোকের কোন
প্রামাণিকতা নেই।
.
তাছাড়া মহাভারতের অশ্বমেধ পর্বের নিম্ন শ্লোকও অত্যন্ত স্পষ্ট ও সশক্ত প্রমাণ বহন করার জন্য এই প্রসঙ্গে উল্লেখযােগ্য। আমরা সর্বত্র এটা লক্ষ্য করেছি যে, সাক্ষাৎ কৃতধর্মা। ঋষিরা পশু হিংসাত্মক যজ্ঞের সব সময় প্রবল বিরােধিতা করেছেন। এখানে নিম্নশ্লোকেও তার প্রমাণ দেখুন ।
.
ততােদীনা পশনদৃষ্টবা, ঋষয়স্তে তপােধনাঃ।
উচুঃ শক্রং সমাগম্য, নায়ং যজ্ঞবিধিঃ শুভঃ।। অপরিজ্ঞানসেতওে, মহান্তং ধর্মমিচ্ছতঃ।
নহিয়জ্ঞে পশুগণাঃ, বিধিদৃষ্টাঃ পুরন্দর।।
ধর্মোপঘাতকস্তেষ, সমারম্ভ স্তব প্রভাে।
নায়ং ধর্মকৃতােয়জ্ঞােন হিংসা ধর্ম উচ্যতে।।
আগমেনৈব তেয়জ্ঞং, কুবন্ত যদি চেচ্ছসি।
বিধিদৃষ্টেনয়জ্ঞেন, ধর্মস্তেষু মহাভবেৎ।।
(অশ্বমেধ পর্বঅধ্যায় ৯১)
.
অনুবাদ - তপােধন ঋষিরাদীন পশুদের দেখে বললেন – এই যজ্ঞের বিধি সংগত নয়। ধর্মোচ্ছুক, তােমাদের এটা বিশাল অজ্ঞানতা। যজ্ঞে পশু বধের কোন বিধান নেই। এর ফলে তােমাদের ধর্মের নাশ হবে। তােমরা যদি চাও তাহলে বেদাদি সত্যশাস্ত্রের বিধান অনুযায়ী যজ্ঞ করাে। এটাই হবে মহান ধর্ম।
.
এছাড়াও ঋষিদের লক্ষণ সম্বন্ধে নিরুত্তে বলেছে -
সাক্ষাৎ কৃতধর্মা ঋষয়ঃ অথবা ঋষয়ে মন্ত্র দ্রষ্টারঃ →অর্থাৎ যারা যথার্থ তত্ত্ব বুঝেন এবং ধর্মকে সাক্ষাৎ করেন। এমন ঋষিরা যখন যজ্ঞাদিতে পশু বধ অজ্ঞানমূলক, ধর্ম নাশক , বেদাদি শাস্ত্রবিরুদ্ধ ও পিপ বলছেন তখন আর কী কোন সন্দেহ থাকতে পারে ?
.
এখন চলুন দেখা যাক মহাভারতের শান্তিপর্বে কি বলা হয়েছে –
মহাভারত, শান্তিপর্ব অধ্যায় ৩, ৩৩৬ শ্লোকে বসু মহারাজের অশ্বমেধের যে বর্ণনা পাওয়া যায় সেখানে সেই সময়কার বিখ্যাত মহান ঋষিরা ও বিদ্বানেরা অংশ গ্রহণ করেছিলেন এবং সেখানে অশ্ববলি দেওয়ার কোন কথাই নেই। এই সম্পর্কে নিম্নলিখিত বর্ণনা দেখুন -
.
তস্য যজ্ঞাে মহানাসীদ শ্বমেধাে মহাত্মনঃ।
বৃহস্পতিরুপাধ্যায়ঃ, তত্র হােতাবভূহ।।
প্রজাপতিসুতাশ্চাত্র, সদস্যাশ্চাভবংস্ত্রয়ঃ।।
ঋষি মেধাতিথিশ্চৈব, তান্ড্যশ্চৈব মহানৃষিঃ।
ঋষিঃ শান্তিমহাভাগঃ, তথা বেদশিরাশ্চয়ঃ।।
ঋষিশ্রেষ্ঠশ্চ কপিলঃ, শালিহােত্রপিতা চ য়ঃ।।
আদ্যঃ কঠস্তিত্তিরিশ্চ, বৈশম্পায়নপূর্বজঃ।
কােেথ দেবহােত্ৰশ্চ, এতে মােড়শ কীর্তিতাঃ ।।
সংভূতাঃ সৰ্বর্সংভারাঃ, তস্মিন্ রাজন্ মহাক্রতৌ।
ন তত্র পশুঘালােভূৎ, সরাজৈবং স্থিতােভবৎ।
অহিংস্রঃ শুচিরদ্রঃ, নিরাশীঃ কর্মসংস্তুতঃ ।।
.
→অর্থাৎ - বসু রাজার অশ্বমেধ নামক যজ্ঞ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিলাে। বৃহস্পতি সেখানে উপাধ্যায়, প্রজাপতির তিন পুত্র এবং অন্য অনেক বিখ্যাত ঋষির মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিল ঋষি কপিল, কঠ, তৈত্তিরি, কম্বাদি সেই যজ্ঞের ঋত্বিক ছিলেন। সেই যজ্ঞটি ছিলাে হিংসারহিত (অহিংস্রঃ), পবিত্র ও মহান। সেখানে পশুদের প্রতি কোন রূপ আঘাত হানা হয়নি (নতত্র পশুঘাতাে অভূবৎ)।
.
যাঁরা অশ্বমেধের অর্থ অশ্বকে বলি দেওয়া মনে করেন তাঁরা একবার চক্ষু খুলে এই অহিংস মহা যজ্ঞের বর্ণনা পাঠ করুন। এর হােতাদের মধ্যে আচার্য বৃহস্পতি, ঋষিশ্রেষ্ঠ কপিল এবং কঠসংহিতা তৈত্তিরীয় সংহিতা, কান্বসংহিতাদির প্রবক্তা ঋষিরাও ছিলেন। তাঁরা সম্পূর্ণ অহিংসরীতিতে এই মহান যজ্ঞ সম্পাদনা করেন।
.
এটাও উল্লেখ করা প্রয়ােজন যে বর্তমান প্রচলিত কিছু ইতিহাস শাস্ত্রে কয়েকটি স্থানে যজ্ঞে পশুবধের উল্লেখ দুরাচারী ব্যক্তিরা করে গিয়েছেন। পরবর্তীতে এটা মিশ্রিত বা প্রক্ষিপ্ত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই কারণ সব শাস্ত্রের মধ্যে বেদ সর্বোচ্চ প্রমাণ।
No comments:
Post a comment